সমস্যা সমাধানের সঠিক আইনি পথ

হঠাৎ কোনো কারণে কোনো বিষয়ে ঝামেলায় পড়ে গেলেন। বুঝতে পারছেন না কার কাছে যাবেন, কীভাবে আইনের আশ্রয় নেবেন আর আইনের আশ্রয় নেওয়ার ঠিক উপায়টাই বা কী। অনেক সময় যথাযথভাবে আইনের আশ্রয় না নিতে পারলে বঞ্চিত হতে হয় সঠিক প্রতিকার থেকে। তাই জেনে রাখুন কোন বিষয়ে ঝামেলা হলে কীভাবে প্রতিকার চাইতে হবে। আইনজীবীর কাছে যাওয়ার আগে কোন আইনজীবী কোন বিষয়ে অভিজ্ঞ, সেটা ভালোভাবে জেনে নিয়েই তাঁর শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

সমস্যাটি যখন পারিবারিক
পারিবারিক কোনো বিষয়ে সমস্যা হলে দেওয়ানি এবং ফৌজদারি দুভাবেই প্রতিকার চাওয়া যায়। তবে এখানে দেখতে হবে পারিবারিক সমস্যাটি আসলে কী নিয়ে। যেমন যদি পারিবারিক নির্যাতনের বিষয় হয় তবে ফৌজদারি আদালতে প্রতিকার চাইতে হবে। সমস্যাটি যদি হয় যৌতুকসংক্রান্ত, তাও ফৌজদারি আদালতে যেতে হবে। নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে যেতে হবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে। তবে মনে রাখতে হবে, ফৌজদারি যেকোনো প্রতিকার চাইতে হলে আপনি সরাসরি আদালতে না গিয়ে কাছের থানায় এজাহার দায়েরের মাধ্যমেও মামলা করতে পারেন। দেনমোহর, ভরণপোষণ, দাম্পত্য সম্পর্ক পুনরুদ্ধার, তালাক, সন্তানদের অভিভাবকত্ব—এ পাঁচটি বিষয়ে কোনো সমস্যা হলে বা বিরোধ দেখা দিলে যেতে হবে পারিবারিক আদালতে।

বাড়িভাড়া নিয়ে বিরোধ
বাড়িভাড়া নিয়ে বিরোধ হলে আইন অনুযায়ী ভাড়া নিয়ন্ত্রকের কাছে যেতে পারেন। সহকারী জজেরা সাধারণত ভাড়া নিয়ন্ত্রক হিসেবে গণ্য হয়ে থাকেন। বাড়িওয়ালা যদি আপনার ভাড়ার টাকা না নিয়ে আপনাকে অযথাই উৎখাত করতে চান, তাহলে ভাড়ার টাকা ভাড়া নিয়ন্ত্রকের আদালতে জমা দেওয়ার সুযোগ আইনে রয়েছে। আবার ভাড়াটেকে উচ্ছেদ করতে চাইলে বাড়িওয়ালারা উচ্ছেদের মামলা করতে পারেন দেওয়ানি আদালতে।

উত্তরাধিকারসংক্রান্ত সমস্যা
উত্তরাধিকারসংক্রান্ত কোনো সমস্যা হলে দেওয়ানি আদালতে যেতে হবে। উত্তরাধিকার সনদ নিতে গেলে যুগ্ম জেলা জজের কাছে আবেদন করতে হবে। তবে উত্তরাধিকারসংক্রান্ত কোনো সনদ কেবল মৃত ব্যক্তির অর্থনৈতিক সম্পত্তির ওপর নেওয়া যায়। জমিজমা নিয়ে কোনো বিরোধ হলে বণ্টনের মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে দেওয়ানি আদালতে। আর কোনো বিরোধ না থাকলে উত্তরাধিকারীরা নিজেরাই আপস-মীমাংসা করে বণ্টনের দলিল করে নিতে পারেন।

পাওনা টাকা আদায় করতে হলে
পাওনা টাকা আদায় করতে চাইলে আপনি দেওয়ানি আদালতে টাকা আদায়ের মোকদ্দমা দায়ের করতে পারেন। আর যদি টাকা আদান-প্রদানসংক্রান্ত কোনো বিশ্বাসভঙ্গের শিকার হন কিংবা প্রতারণার শিকার হন, তাহলে ফৌজদারি আইনের আশ্রয়ও নিতে পারেন।

সাইবার অপরাধের শিকার হলে
ইন্টারনেটে হয়রানির শিকার হলে আপনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। নিকটস্থ যেকোনো থানায় এজাহার দায়ের করতে পারেন। এ-সংক্রান্ত বিচার হয় ঢাকায় অবস্থিত সাইবার ট্রাইব্যুনালে। তবে এ বিষয়ে প্রতিকার নিতে চাইলে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে এবং যথেষ্ট প্রমাণাদি থাকতে হবে। যদিও এ আইনটিকে কালো আইন হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

যা মনে রাখবেন
যদি কোনো বিরোধের বিষয়ে দায়ী ব্যক্তিকে শাস্তির আওতায় আনতে চান তাহলে ফৌজদারি আদালতে আশ্রয় নিতে হয় আর যদি কোনো বিষয়ে অর্থনৈতিক, পদসংক্রান্ত এবং অন্যান্য প্রতিকার পেতে চাইলে দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে হয়। অনেক সময় একই বিষয়ে দুই ধরনের প্রতিকারের পথ খোলা থাকে তখন আসলে আপনি কী চাচ্ছেন সেই বিষয়ে আইনজীবীকে খোলাখুলি বলুন।
লেখাঃ তানজিম আল ইসলাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *